বাংলাদেশের মতো দেশে এত বেশি হারে (১৫ শতাংশ) ভ্যাট থাকা উচিত নয়। কারণ, দেশের অনেক প্রতিষ্ঠান ভ্যাটের রেয়াত নিতে পারে না। তাই ভ্যাট হার বাস্তবসম্মত করা উচিত বলে এই প্রস্তাব দেন এসএমএসি অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেসের পরিচালক স্নেহাশীষ বড়ুয়া। বর্তমানে ভ্যাট আইনে একাধিক হারে ভ্যাট রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানও একক ভ্যাট হারের পক্ষে কথা বলেছেন। পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশ ও এসএমএসি অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেস লিমিটেড রাজধানীর এক হোটেলে এই সেমিনারের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান।
অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিবিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন আয় না হলেও এ দেশে প্রতিষ্ঠানকে কর দিতে হয়। উৎসে করের বিষয়টি পর্যালোচনা করা দরকার। কারণ, এখানে অনেক অন্যায্য কর আদায় করা হয়। বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) কথা শুনলেই ভয় হয়। সেখানে শুধু হয়রানি হয়।
এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান জানান করছাড় কমাতেই হবে। তা না হলে ঋণের বোঝা বাড়বে। একসময় ঋণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। এসএমএসি অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেসের পরিচালক স্নেহাশীষ বড়ুয়া সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এতে তিনি ১১টি সংস্কারের প্রস্তাব দেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো কর প্রশাসন ও নীতি বিভাগ আলাদা করা; বাজেট কার্যক্রম গতিশীল ও কার্যকর করে তোলা; অটোমেশন; অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতির আকার ছোট করে প্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতির আকার বড় করা; একক মূসকহার নির্ধারণ ও বর্তমান আইনের পুনর্মূল্যায়ন; স্তরভিত্তিক আমদানি শুল্ক নির্ধারণ এবং দেশীয় উৎপাদনকারীদের জন্য সর্বনিম্ন আমদানি শুল্ক চালু ইত্যাদি।
পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলদেশের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ আরেকটি মূল বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, করবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত হলে বিনিয়োগ বাড়বে। গবেষণায় দেখা গেছে, করহার ১ শতাংশ বাড়লে বিদেশি বিনিয়োগ সাড়ে ৩ শতাংশ কমে। আবার করভার ২০ শতাংশ কমালে বিদেশি বিনিয়োগ প্রায় ১৪ গুণ এবং রাজস্ব আয় ছয় গুণের বেশি বাড়ে। তাই শুল্ক-কর খাতে সংস্কার প্রয়োজন।
ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন করের (মূসক) হার ১০ শতাংশ করার পক্ষে মত দেন বিএসআরএমের চেয়ারম্যান আলীহোসেন আকবর আলী। তাঁর মতে, ভ্যাট হার কমালে বহু মানুষ ভ্যাট দিতে আগ্রহী হবেন। তিনি আরও বলেন, কর রেয়াত পেতে আবেদন করলে কর কর্মকর্তারা হয়রানি করেন। তিনি দাবি করেন, সাত বছর ধরে তাঁর প্রতিষ্ঠানের কর রেয়াতের সাড়ে চার শ কোটি টাকা আটকে আছে।
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, তৈরি পোশাক খাতের ঝুট পুড়িয়ে ফেললে খরচ কম, কর দিতে হয় না। কিন্তু ঝুট বিক্রি করতে গেলে ভ্যাট দিতে হয়। এতে কারখানা মালিকের খরচ বাড়ে।
সেমিনারে আরও অনেকেই এর পক্ষে বক্তব্য দেন।