আজ বৃহস্পতিবার প্রথম প্রহরে (বাংলাদেশ সময় আজ সকাল ১০টা ১ মিনিট) পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা। এ সময়ের পর চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে থাকা জাহাজে যুক্তরাষ্ট্রগামী যেসব পণ্য তোলা হবে, সেগুলোতে বসবে পাল্টা শুল্ক। চট্টগ্রাম থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বন্দরে কনটেইনারবাহী পণ্য পৌঁছাতে ৩০ থেকে ৪৫ দিন সময় লাগে।
গত বছর বাংলাদেশ প্রতিটি টি-শার্ট যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছে ১ ডলার ৬২ সেন্টে (১৯৯ টাকা প্রায়)। এই টি-শার্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আদায় করেছে ২৭ সেন্ট (৩৩ টাকা)। এখন ২০ শতাংশ হারে পাল্টা শুল্ক হিসাবে দিতে হবে আরও বাড়তি ৩২ সেন্ট (৩৯ টাকা)। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ থেকে একটি টি-শার্ট নিতে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারকদের গড়ে ৫৯ সেন্ট (৭২ টাকা) শুল্ক পরিশোধ করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে সুতির টি-শার্ট রপ্তানিতে বাংলাদেশের বড় প্রতিযোগী ভারত। যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের টি-শার্টের গড় রপ্তানি মূল্য বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। দেশটির পণ্যের ওপর প্রথম দফায় ২৫ শতাংশের পর গতকাল বুধবার আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফলে সব মিলিয়ে ভারত থেকে একটি টি-শার্ট নিতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের মোট শুল্ক দিতে হবে ১ ডলার ২৫ সেন্ট।
একসময় মিয়ানমারকে বাংলাদেশের পোশাক খাতের জন্য ভবিষ্যৎ হুমকি হিসেবে দেখা হতো। তবে দেশটির পণ্যে ৪০ শতাংশ পাল্টা শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রতিটি টি-শার্ট রপ্তানিতে তাদের দিতে হবে ১ ডলার ৮৮ সেন্ট, যা বাংলাদেশের রপ্তানিমূল্যের চেয়েও বেশি। এর ফলে রপ্তানিযুদ্ধে তারা কার্যত বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে চলে গেছে।
আবার আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়াকেও একসময় হুমকি মনে করত রপ্তানিকারকেরা। কারণ, আফ্রিকান গ্রোথ অ্যান্ড অপরচুনিটি অ্যাক্টের আওতায় শুল্কমুক্ত রপ্তানির সুবিধা ছিল তাদের। তবে বাণিজ্যসুবিধার শর্ত ভাঙায় ২০২২ সালের ২ জানুয়ারি এই চুক্তি থেকে ইথিওপিয়াকে বের করে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি এখন প্রতিযোগিতার মহাসাগরে পড়েছে।
বাংলাদেশের রপ্তানির একক বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে, দেশটিতে গত অর্থবছরে ৮৭৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৭৬০ কোটি ডলার। এত দিন বাংলাদেশের পণ্যে কার্যকর গড় শুল্কহার ছিল ১৫ শতাংশ। তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে গড় কার্যকর শুল্কহার ছিল ১৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
নতুন করে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক যুক্ত হয়ে গড় কার্যকর শুল্কহার আরও বাড়বে। তবে শুল্কহার বাড়লেও বাংলাদেশের বড় প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনামের সমানই রয়েছে। আবার চীন ও ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের শুল্কহার কম। সব মিলিয়ে নতুন পাল্টা শুল্কে বাংলাদেশকে প্রতিযোগিতায় থাকা কিংবা অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকার কথা বলছেন রপ্তানিকারকেরা।