চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে তৈরি পোশাকশিল্পে মূল্য সংযোজন দাঁড়িয়েছে ৫৯ শতাংশে। গত দুই অর্থবছর পণ্য রপ্তানি বাড়িয়ে দেখায় রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। তখন রপ্তানির পাশাপাশি মূল্য সংযোজনও কৃত্রিমভাবে বেড়ে গিয়েছিল। পরিসংখ্যানের এই গরমিলের বিষয়টি চলতি বছরের মাঝামাঝি বাংলাদেশ ব্যাংক সামনে আনে। তারপর রপ্তানির পরিসংখ্যান সংশোধন করা হয়। তাতে গত দুই অর্থবছরের সাত প্রান্তিকে পোশাক খাতে মূল্য সংযোজনও কমে যায়। পোশাক রপ্তানি থেকে তুলা, সুতা, কাপড় ও সরঞ্জামের আমদানি ব্যয় বাদ দিয়ে নিট রপ্তানির হিসাব করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অনেকে প্রকৃত রপ্তানি আয়কে পোশাক খাতের মূল্য সংযোজন হিসেবেও অভিহিত করে থাকেন। রপ্তানি আয় বাড়িয়ে দেখানোর কারণে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর–ডিসেম্বর) তৈরি পোশাক রপ্তানিতে মূল্য সংযোজন একলাফে ৫৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। তারপরের পাঁচ প্রান্তিকে মূল্য সংযোজন ৭০ থেকে ৭২ শতাংশের মধ্যে ছিল।
যদিও সংশোধনের পর দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জানুয়ারি-মার্চ ও এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে মূল্য সংযোজন কমে দাঁড়ায় ৬২ শতাংশে। এ ছাড়া গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মূল্য সংযোজন কমে সাড়ে ৬০ থেকে ৬২ শতাংশে দাঁড়ায়।
চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রপ্তানি হওয়া ৯৫১ কোটি ডলারের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ১৮৫, জার্মানিতে ১১৬, যুক্তরাজ্যে ১১৪, স্পেনে ৮৭, ফ্রান্সে ৪৮, ইতালিতে ৩২ ও নেদারল্যান্ডসে ৫১ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই সময়ে সবচেয়ে বেশি ওভেন পোশাক রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে, ১১৭ কোটি ডলারের। আর জার্মানিতে সর্বোচ্চ ৭৭ কোটি ডলারের নিট পোশাক রপ্তানি হয়। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪ হাজার ২৬১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। তখন আমদানি হয়েছিল ১ হাজার ৯৪৪ কোটি ডলারের কাঁচামাল। তখন মূল্য সংযোজন ছিল ৫৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ। পরের অর্থবছরে ৩ হাজার ৮১৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে কাঁচামাল আমদানি হয়েছিল ১ হাজার ৫৯৯ কোটি ডলারের। তাতে ওই অর্থবছরে মূল্য সংযোজন বেড়ে ৫৮ শতাংশ হয়। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩ হাজার ৬১৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। আর কাঁচামাল আমদানির পরিমাণ ১ হাজার ৪৪০ কোটি ডলারের। সেই হিসাবে মূল্য সংযোজন হয়েছে ৬০ শতাংশ।
নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, তৈরি পোশাকের মূল্য সংযোজন বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখছে নিট পোশাক খাত। কারণ, নিট পোশাকে ৮০ শতাংশের বেশি মূল্য সংযোজন হয়ে থাকে। তবে নগদ সহায়তা কমানোর পর তীব্র প্রতিযোগিতায় পড়ছে দেশীয় বস্ত্রকল। ভারত থেকে সুতা ও চীন থেকে কাপড় আমদানি বেড়েছে। এতে নিট পোশাক খাতের কাঁচামাল আমদানিনির্ভর হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটের কারণে বস্ত্রকলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
ফলে ভবিষ্যতে মূল্য সংযোজন বাড়ানো তো দূরের কথা, উল্টো কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।