চায়ের দরপতন ঠেকাতে চলতি মৌসুমের (২০২৪-২৫) নিলামে ফ্লোর প্রাইস বা ন্যূনতম নিলাম মূল্য বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। তাতে গত মৌসুমের তুলনায় চলতি মৌসুমে নিলামে চায়ের গড় মূল্য বেড়েছে। তবে উৎপাদকেরা বলছেন, নিলামে দাম বাড়লেও চায়ের উৎপাদন খরচ বেড়েছে আরও বেশি। এতে এবারও অনেক বাগানমালিককে লোকসান গুনতে হবে।
চায়ের নিলামে গড় দাম অস্বাভাবিক কমে আসে গত মৌসুমে (২০২৩-২৪)। সে সময় নিলামে চায়ের কেজিপ্রতি গড় দাম নেমে আসে ১৭১ টাকায়, যা আগের মৌসুমের তুলনায় কেজিতে ২৫ টাকা কম। উৎপাদন খরচের চেয়ে নিলামে চায়ের বিক্রয়মূল্য কমে যাওয়ায় লোকসান ঠেকাতে তৎপর হয় সরকার। এরপরই সরকারের একটি কমিটি চায়ের নিলামে ন্যূনতম দাম বা ফ্লোর প্রাইসের সুপারিশ করে। এই সুপারিশ বাস্তবায়িত হয় চলতি মৌসুমের নিলাম শুরুর দিন অর্থাৎ গত বছরের ২৯ এপ্রিল থেকে।
নিলামে চা বেচাকেনায় মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ব্রোকার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ন্যূনতম নিলাম মূল্য কার্যকর হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ৪১টি নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ৪০টি নিলামের বেচাকেনার হিসাব পাওয়া গেছে। তাতে দেখা যায়, ৪০টি নিলামে এবার ৭ কোটি ৫৫ লাখ কেজি চা বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি চায়ের গড় মূল্য ছিল ২০৬ টাকা ৪৬ পয়সা। গত মৌসুমের (২০২৩-২৪) একই সময়ে নিলামে চায়ের গড় মূল্য ছিল ১৮০ টাকা ৮১ পয়সা। সেই হিসাবে কেজিপ্রতি গড় মূল্য বেড়েছে ১৪ শতাংশ বা ২৫ টাকা ৬৫ পয়সা।
চলতি মৌসুমে চট্টগ্রামে আটটি নিলাম অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এর মধ্যে আগামী ২১ এপ্রিল সর্বশেষ নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। মৌসুমের শেষে চায়ের মান নিম্নমুখী থাকে। ফলে মৌসুম শেষে গড় দাম আরও কমতে পারে। অবশ্য এখন পর্যন্ত যে দর পাওয়া গেছে, তা ২০১৭-১৮ মৌসুমের তুলনায় কেজিতে সাড়ে ৭ টাকা কম। ২০১৮-১৯ মৌসুমের তুলনায় কেজিতে ৫৬ টাকা কম। চা–বাগানমালিকেরা বলছেন, ২০১৯-২০ মৌসুম থেকে ধারাবাহিকভাবে উৎপাদন খরচের চেয়ে চায়ের নিলামমূল্য কমেছে।
চা–বাগানমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চা সংসদের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর ধারাবাহিকভাবে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। সর্বশেষ ২০২৩ সালে চায়ের উৎপাদন খরচ ছিল ২২৬ টাকা। গত বছর চায়ের উৎপাদন খরচ কেজিতে ৯ টাকা বেশি হতে পারে বলে ধারণা করছেন বাগানমালিকেরা। তবে এখনো চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করেনি চা–বাগানমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চা সংসদ।