ডিজিবক্সের ডিজিটাল লকারে পণ্য সংগ্রহের জন্য ৭২ ঘণ্টা সময় পাওয়া যায়। এর মাশুলও প্রচলিত এ ধরনের সেবার বিপরীতে মাশুলের অর্ধেকের কম। এ ছাড়া সেবার নিরাপত্তা দেওয়া হয় টু–ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন কোডের মাধ্যমে। দেশে এই ডিজিটাল লজিস্টিক প্রযুক্তি সেবা নিয়ে এসেছে স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান ‘ডিজিবক্স’।
বর্তমানে দেশের ৫৫টি স্থানে এই ডিজিটাল লকার সেবা রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বক্স রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার ৩৬টি স্থানে এই লকার স্টেশন রয়েছে। আর রংপুর, রাজশাহী, বগুড়া, সিলেট ও চট্টগ্রাম জেলায় বাকি লকারগুলো রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত প্রায় সাত লাখের বেশি গ্রাহককে সেবা দিয়েছে।
রাজধানীর সব কটি মেট্রোস্টেশনে তাদের এই ডিজিটাল লকার–সুবিধা রয়েছে। তবে এসব ডিজিটাল লকারের ৬০ শতাংশ সেবা দিচ্ছে ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান দারাজ বাংলাদেশ।
অর্ডার করার সময় গ্রাহক ডিজিবক্স অপশন চাইলে ই–কমার্স প্ল্যাটফর্ম থেকে রাইডার বা ডেলিভারিম্যান পণ্য ওই গ্রাহকের নিকটস্থ ডিজিবক্সে রেখে যাবেন। গ্রাহক তখন একটি এসএমএস পাবেন। গ্রাহক ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সুবিধাজনক সময়ে পণ্য সংগ্রহ করতে পারবেন।
বর্তমানে ঢাকার জিগাতলা, মোহাম্মদপুর, আইসিটি ভবন, পূর্বাচল, গুলশান–২ ও তেজগাঁওয়ে এবং চট্টগ্রামে আগ্রাবাদ হোটেলের নিচে ডিজিবক্স চালু আছে। একেকটি পয়েন্ট থেকে দিনে ৩০০ গ্রাহককে সেবা দেওয়া যায়।
ডিজিবক্সের চেয়ারম্যান মোরশেদুল আলম বলেন, ‘আমাদের এই সেবার মাধ্যমে ভেলিভারি চার্জ ও ঝামেলা কমেছে। তাই আগামী দুই বছরে আমাদের বক্সের সংখ্যা বাড়িয়ে ২৫ হাজার করতে চাই। এর ফলে দেশের ই–কমার্সের ডেলিভারি সেবার গতি আরও বাড়বে।’
ডিজিবক্সে প্রায় এটিএম বুথের স্ক্রিনের মতোই একটি স্ক্রিন রয়েছে। সেখানে ‘রাইডার’ ও ‘কাস্টমার’ নামে দুটি অপশন আছে। ডেলিভারিম্যান যখন পণ্য রাখতে যাবেন, তখন রাইডার অপশন ব্যবহার করবে। অন্যদিকে গ্রাহকের জন্য কাস্টমার অপশন।
সেখানে ই–মেইল বা মুঠোফোন নম্বর দিলে একটি ওটিপি কোড আসবে মেইলে বা মুঠোফোন নম্বরে। সেই কোড দিলে গ্রাহকের রাখা পণ্যের বক্সটি খুলে যাবে। গ্রাহক পণ্য সংগ্রহ করবেন। এ ছাড়া ১০০০ ফিক্স নামের প্রতিষ্ঠানটির সেবা নিতে পণ্য দেওয়া ও নেওয়া দুটিই এই বক্সের মাধ্যমে করা যাবে। তাদের জন্য আলাদা বক্স আছে।
দারাজ বাংলাদেশ ও ১০০০ ফিক্স সার্ভিসের সেবা পাওয়া যাবে ডিজিবক্সে। বর্তমানে দারাজ বাংলাদেশ ডিজিবক্সের ৩৩টি ডিজিটাল লকারের মাধ্যমে সেবা দিয়ে আসছে। এর মধ্যে ঢাকায় রয়েছে ২৯টি। এ ছাড়া বাকি চারটি রাজশাহী, বগুড়া, রংপুর ও চট্টগ্রাম জেলায়। এই প্রযুক্তির ফলে এই ই–কমার্সের গ্রাহক ২৪ ঘণ্টা তাঁদের প্যাকেজ ডেলিভারির সুবিধা পান।
এই সেবা পাওয়ার জন্য পণ্য কেনার সময় ডেলিভারি মাধ্যম ডিজিবক্স নির্বাচন (সিলেক্ট) করতে হয়। তাঁর কাছাকাছি ডিজিবক্সের স্থান ঠিক করতে হবে। এর মাধ্যমে সর্বোচ্চ এক কেজির পণ্য অর্ডার করতে পারবেন। ফলে আকারও বক্সের আকারের চেয়ে বড় হওয়া যাবে না।
অর্ডারের পর পণ্য পৌঁছালে গ্রাহকের মুঠোফোনে খুদে বার্তা চলে আসবে। প্রত্যেক গ্রাহকের জন্য ডিজিবক্স স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি ইউনিক ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) বা কিউআর কোড তৈরি করে। প্রচলিত ডেলিভারি মাধ্যমে প্রকারভেদে ডেলিভারি চার্জ দিতে হয় ৭০ থেকে ১১০ টাকা। পণ্যের আকার ও স্থানভেদে এই চার্জ আরও বাড়তে পারে। তবে ডিজিবক্সের মাধ্যমে ডেলিভারি নিলে গ্রাহককে ২২ থেকে ৪৫ টাকা দিতে হয়।
দারাজ বাংলাদেশের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার এ এইচ এম হাসিনুল কুদ্দুস বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমরা এই সেবা বিশ্ববিদ্যালয়, পার্ক, অফিস কমপ্লেক্স ও আবাসিক এলাকায় সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছি। দীর্ঘ মেয়াদে ডিজিবক্সকে “গ্রিন লজিস্টিকস” সমাধান হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে।’
