১৩ মার্চ প্রকাশিত হলো টাইম ম্যাগাজিনের ‘দ্য ওয়ার্ল্ডস গ্রেটেস্ট প্লেসেস অব ২০২৫’–এর ১০০ স্থাপনার তালিকা। সেখানে প্রথমবারের মতো স্থান পেল কোনো বাংলাদেশি স্থাপনা, আর সেটি স্থপতি সায়কা ইকবালের নকশা করা, সাভারের আশুলিয়ার জামগড়ার দরগার পাড় এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা জেবুন নেসা মসজিদ।
ব্যস্ত রাজধানীর ভিড় আর যানজট ঠেলে আশুলিয়ার জামগড়ার দরগার পাড় এলাকায় গড়ে তোলা জেবুন নেসা মসজিদটি দেখলে মনে হয়, অন্য কোথাও চলে আসিনি তো? আশপাশের কোনো স্থাপনার সঙ্গেই যে এর মিল নেই! স্থাপত্যের উদ্ভাবন ও আধ্যাত্মিক প্রশান্তির মেলবন্ধনের কথা মাথায় রেখে মসজিদটির নকশা করেছেন সায়কা। ফলে এর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। বাংলাদেশের গ্রামীণ উঠান, বাঁশঝাড়, পারস্যের বাড়ির বাগান, লুই আই কানের সংসদ ভবনের প্রেয়ার হল, ইস্তাম্বুলের আয়া সোফিয়া মসজিদ—এসবই ছিল সায়কার অনুপ্রেরণা।
এসি তো দূরের কথা, একটা ফ্যানও নেই এই মসজিদে। সায়কা এমনভাবে নকশা করেছেন যে প্রাকৃতিকভাবেই মসজিদের ভেতরটা থাকে ঠান্ডা। চতুর্ভুজাকৃতির মসজিদটিতে নেই কোনো চিরাচরিত স্তম্ভ। মাঝখানের গোল গম্বুজটিই মসজিদের মূল ভিত।
প্রাকৃতিকভাবে আলো-বাতাস চলাচলের জন্য মসজিদের কংক্রিটের দেয়ালে ছোট ছোট আয়তাকার শূন্যস্থান বা ফুটো রেখেছেন সায়কা। মূল স্থাপনার চারপাশের চারটা কোণকে বলা যায় ‘লাইট কোর্ট’। অনেকটা বাংলাদেশের সংসদ ভবনের প্রেয়ার হলের মতো। সেদিক দিয়েও আছে আলো-বাতাসের অবাধ যাতায়াত।
মসজিদের পশ্চিমে লেক। এই জলাশয়ের কারণেই বাতাস প্রাকৃতিকভাবে শীতল হয়ে মসজিদের দেয়ালের আয়তাকার শূন্যস্থান বা ফুটো দিয়ে প্রবেশ করে মসজিদের ভেতরে। সীমানাজুড়ে কাচের পাঁচিল। ফলে প্রাকৃতিক আলো বাধা পায় না। আর এই কাচের পাঁচিলের নকশাও এমন, যাতে ভেতরে বাতাস প্রবেশ করতে পারে অনায়াসে।
মসজিদটির এক পাশে ছাতিমগাছ, অন্য পাশে বাঁশঝাড়। আছে আরও নানান প্রজাতির গাছ। গাছের শীতল ছায়া নিমেষে মুছে দেয় ক্লান্তি। পানি, গাছ, পাখির ডাক, বুনো ফুল, লতাপাতা, আলো–বাতাসের সম্মিলনে মসজিদটির আবহ এমন, যাতে শিল্প এলাকার যান্ত্রিক ও কলুষিত পরিবেশে নেমে এসেছে প্রশান্তি। মসজিদ তৈরির সব উপকরণ ছিল দেশীয়, কারিগরেরাও এ দেশের।
মসজিদটি মূলত আইডিএস গ্রুপের তৈরি পোশাক কারখানার প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কর্মীর নামাজের জন্য বানানো। তবে অন্যরাও সেখানে নামাজ পড়তে পারেন। কেবল নামাজের জন্যই নয়, দর্শনার্থীরা নামাজের সময়ের বাইরেও শান্তির খোঁজে যেকোনো সময় আসতে পারেন এখানে। কিছুদিন আগে কজন মার্কিন স্থপতির একটি দল এই মসজিদ দেখার জন্যই এসেছিলেন বাংলাদেশে।
আইডিএস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাঁর প্রয়াত মা জেবুন নেসার নামে বানিয়েছেন এই মসজিদ।
দ্য ওয়ার্ল্ডস গ্রেটেস্ট প্লেসেস অব ২০২৫’–এ স্থান পেল জেবুন নেসা মসজিদ।
RELATED ARTICLES