দেশে সঞ্চয়পত্র বিক্রি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। ধারাবাহিকভাবে কমছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। গত মে মাসে সঞ্চয়পত্রে নিট বিক্রি কমেছে ৩ হাজার ২৮ কোটি টাকা। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাস জুলাই–সেপ্টেম্বরে ১৪ হাজার ৯৯২ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে বিক্রি হয়েছিল ২১ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরে নতুন করে সঞ্চয়পত্র বিক্রি সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা বা ৩১ শতাংশ কমেছে।
বিভিন্ন কড়াকড়ি আরোপের কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ধস নেমেছে। একটি সময় মধ্যবিত্ত পরিবারের আস্থার জায়গা ছিল সঞ্চয়পত্র। চাকরি থেকে অবসরের পর পাওয়া অর্থ কিংবা মধ্যবিত্ত পরিবারের হাতে বাড়তি টাকা থাকলে সেগুলো সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতো। কিন্তু এখন উল্টো ঘটনা ঘটছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে নতুন করে সঞ্চয়পত্র বিক্রির পাশাপাশি সঞ্চয়পত্রের নগদায়নও (ভাঙানো) কমে গেছে। এ কারণে এই তিন মাসে সঞ্চয়পত্রের আসল পরিশোধ বাবদ সরকারের খরচও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে।
এ বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বরে সঞ্চয়পত্রের আসল বাবদ গ্রাহকদের পরিশোধ করা হয়েছে ৬ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ২২ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরে সঞ্চয়পত্রের আসল পরিশোধ বাবদ সরকারের খরচ কমেছে ১৬ হাজার ২৬২ কোটি টাকা বা প্রায় ৭১ শতাংশ।
তথ্য মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই- মে) যে পরিমাণ সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, তা দিয়ে গ্রাহকদের আগে বিনিয়োগ করা সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। উল্টো ৩ হাজার ২৮ কোটি টাকা সরকার তার কোষাগার ও ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়ে শোধ করেছে। যদিও গত মাসে নিট বিক্রি কমেছিল ৩ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা। এক সময় সঞ্চয়পত্র ছিল দেশে সবচেয়ে বেশি সুদের বিনিয়োগ পণ্য; কিন্তু বর্তমানে ট্রেজারি বিল–বন্ডের সুদহার সঞ্চয়পত্রের চেয়ে বেশি। আবার ব্যাংকের ঋণের সুদহারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমানতের সুদও এখন ঊর্ধ্বমুখী।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ৩ বছরের বেশি মেয়াদের আমানতে ১১ শতাংশ পর্যন্ত সুদে দেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংকের আমানতের সুদহার সঞ্চয়পত্রের মুনাফা বা সুদহারের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। ফলে বেশি মুনাফার কারণে সঞ্চয়পত্রের প্রতি মানুষের যে প্রবল আগ্রহ ছিল, তাতে কিছুটা ভাটা পড়েছে।
কোনো স্কিমের মেয়াদ শেষ হলে আবার সেখানেই বিনিয়োগ করতেন বেশির ভাগ গ্রাহক। তবে এখন যাদের সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষ হচ্ছে তারা আর নতুন করে এখানে বিনিয়োগ করছেন না। ফলে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। যে কারণে বিক্রির চেয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধ বেশি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।