টানা আট মাস ধরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে আছে। বাজারে জিনিসপত্রের ঊর্ধ্বমুখী দামের কারণে গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষ বড় ধরনের ভোগান্তিতে পড়েছেন। শীতের শুরুতে বাজারে শাকসবজির সরবরাহ বাড়লেও দাম তেমন কমছে না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপও কাজ করছে না। গত নভেম্বর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ। এটি গত সাড়ে ১৩ বছরের মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হার। গত জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে উঠেছিল। নভেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাড়ার পাশাপাশি সার্বিক মূল্যস্ফীতিও বেড়ে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশে উঠেছে। অর্থাৎ গত বছরের নভেম্বরে ১০০ টাকায় যে পণ্য ও সেবা কেনা গেছে, চলতি বছরের নভেম্বরে একই পরিমাণ পণ্য ও সেবা কিনতে ভোক্তাকে ১১১ টাকা ৩৮ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।
গত মার্চ মাসের পর থেকে টানা আট মাস খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের নিচে আর নামেনি। মূল্যস্ফীতি কমাতে সরকার নানা ধরনের পদক্ষেপ নিলেও সেগুলো দৃশ্যত কাজ করছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতিমধ্যে নীতি সুদহার ১০ শতাংশে বৃদ্ধি করেছে। পাশাপাশি পণ্যমূল্যের রাশ টেনে ধরতে সরকার খাদ্যপণ্যের আমদানিতে শুল্ক কমিয়েছে কিংবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরোপুরি প্রত্যাহার করেছে। আমদানি সহজ করার জন্য ব্যাংকগুলোও বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এর আগে বলেছেন, মূল্যস্ফীতি কমতে আরও খানিকটা সময় লাগবে।
বিবিএসের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, শহরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি গ্রামের চেয়ে বেশি। নভেম্বর মাসের হিসাবে, শহরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৬৩ শতাংশে। আর গ্রামে এই হার ১৩ দশমিক ৪১ শতাংশ। এর মানে হলো গ্রামের মানুষের তুলনায় শহরের মানুষকে খাবার কিনতে আগের চেয়ে বেশি টাকা খরচ করতে হচ্ছে।
বিবিএসের হিসাবে, একটি পরিবারকে গড়ে তাদের আয়ের ৪৮ শতাংশ অর্থই খাবার কেনার পেছনে খরচ করতে হয়। অন্যদিকে খাবার কিনতে গরিব পরিবারকে তাদের আয়ের দুই–তৃতীয়াংশের মতো অর্থ খরচ করতে হয়।