বেসরকারি ব্যাংকগুলো প্রতিটি হিসাব বছরের শেষে শেয়ারধারীদের নগদ ও স্টক বা বোনাস লভ্যাংশ দিয়ে থাকে। কিন্তু এবারে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছরের আর্থিক হিসাবের ভিত্তিতে কোন ব্যাংক লভ্যাংশ দিতে পারবে এবং কোন ব্যাংক পারবে না, তা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। পাশাপাশি যেসব ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তি মজবুত আছে তারা কী পরিমাণ লভ্যাংশ দিতে পারবে, তারও নীতিমালা করে দেওয়া হয়েছে। এভাবে ব্যাংকগুলোর শেয়ারের বিপরীতে লভ্যাংশ বিতরণে কড়াকড়ি আরোপ করে নতুন নীতিমালা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, এত দিন দেখা গেছে যে ব্যাংক প্রকৃতপক্ষে লোকসান করেছে, এরপরও বড় অঙ্কের মুনাফা নিয়ে গেছেন পরিচালক ও অন্য শেয়ারধারীরা। মুনাফার বিপরীতে সরকারকেও কর পরিশোধ করেছেন। ফলে ব্যাংকগুলোর আর্থিক পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়েছে। নতুন নিয়ম জারির ফলে প্রকৃতপক্ষে ভালো অবস্থানে আছে এমন ১০-১২টি ব্যাংক ভালো পরিমাণ লভ্যাংশ দিতে পারবে। অন্যদিকে সবার আগে বাদ পড়বে যেসব ব্যাংক এস আলমের নিয়ন্ত্রণে ছিল সেগুলো।
নতুন এ নীতিমালা চলতি ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরের লভ্যাংশ ঘোষণার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর জন্য প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ ২০২৬ সালে যে লভ্যাংশ দেওয়া হবে সে ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। তবে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণে ব্যর্থ যেসব ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিলম্ব সুবিধা নিয়েছে, তারা ২০২৪ সালের জন্য চলতি বছরে কোনো লভ্যাংশ দিতে পারবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঘটায় সামগ্রিকভাবে ব্যাংকিং খাতে চাপ সৃষ্ট হয়েছে। তা মোকাবিলা করে ব্যাংকগুলো যাতে দেশের অর্থনীতিতে যথার্থ অবদান রাখতে পারে সে জন্য লভ্যাংশ বিতরণের নীতিমালা করা হয়েছিল। এর উদ্দেশ্যে হলো, ব্যাংকগুলোর মুনাফা যথাসম্ভব অবণ্টিত রেখে মূলধন কাঠামো অধিকতর শক্তিশালী ও সুসংহত করার মাধ্যমে পর্যাপ্ত তারল্য বজায় রাখা। বর্তমানে দেশের ব্যাংক খাতের সার্বিক পরিস্থিতি, আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষা, ব্যাংকগুলোর আর্থিক সক্ষমতা এবং ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের রিটার্নের বিষয়টি সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করা হয়েছে।
শেয়ারের বিপরীতে লভ্যাংশ বিতরণের ক্ষেত্রে নতুন নীতিমালা মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। তাদের ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা মেনে চলতে বলা হয়েছে।