গত বছরের প্রথম ৯ মাসে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৬ ব্যাংকের সম্মিলিত প্রকৃত সুদ আয় ছিল ২১ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা। একই সময়ে ব্যাংকগুলো ট্রেজারি বিল–বন্ডসহ অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ থেকে আয় করেছে ১৮ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। অনেক ব্যাংকের বিনিয়োগ আয় প্রকৃত সুদ আয়কেও ছাড়িয়ে গেছে। ব্যাংকের মূল ব্যবসা সুদ আয়। কম সুদে মানুষের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে সেই টাকা বেশি সুদে ঋণ দিয়ে ব্যবসা করে ব্যাংকগুলো। আমানতের সুদ ও ঋণের সুদের ব্যবধানই ব্যাংকের আয়ের প্রধান উৎস। এ কারণে আমানতের সিংহভাগ অর্থ ব্যাংকগুলো ঋণ দিয়ে থাকে।
কয়েক বছর ধরে ব্যবসা–বাণিজ্য ও শিল্প খাতের বিনিয়োগের স্থবিরতার কারণে বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা কমে গেছে। এ কারণে ব্যাংকের মূল ব্যবসা সুদ আয় কমেছে। আবার নানা ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রেও ব্যাংকগুলো কিছুটা লাগাম টেনেছে। তবে আমানতের অর্থ অলস ফেলে রাখেনি ব্যাংকগুলো। ঋণের বদলে সরকারি ট্রেজারি বিল–বন্ডে বিনিয়োগ করে ভালো মুনাফা করেছে এসব ব্যাংক। ফলে দেশের ব্যাংকগুলোর মূল ব্যবসা সুদ আয়কে প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছে বিনিয়োগ আয়। ব্যাংক খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, কয়েক বছর ধরে অর্থসংকটে ছিল সরকার। এ কারণে নানা খরচ ও দায় মেটাতে সরকারও চড়া সুদে ব্যাংক খাত থেকে অর্থ ধার করেছে।
এ কারণে বেড়েছে ট্রেজারি বিল–বন্ডের সুদহার। আর এটিকে বিকল্প আয়ের বড় সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়েছে ব্যাংকগুলো। তাতে বিল–বন্ডের বিনিয়োগ ব্যাংকগুলোর জন্য বিকল্প আয়ের বড় উৎস হয়ে উঠেছে। গত বছরের প্রথম ৯ মাসে (জানুয়ারি–সেপ্টেম্বর) শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৬টি ব্যাংকের প্রকৃত সুদ আয় ছিল ২১ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা। আর একই সময়ে এসব ব্যাংক সরকারি ট্রেজারি বিল, বন্ড ও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে আয় করেছে ১৮ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। ফলে কিছু ব্যাংকের মুনাফা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। প্রকৃত সুদ আয় ও বিনিয়োগ আয় মিলিয়ে ৩৬ ব্যাংকের সম্মিলিত আয় দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা। তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, শেয়ারবাজারের ব্যাংকগুলোর গত বছরের প্রথম ৯ মাসে ঋণের সুদ বাবদ সম্মিলিত আয় ছিল ৮৬ হাজার ৩৩৯ কোটি টাকা। একই সময়ে আমানতের সুদ বাবদ সম্মিলিত ব্যয় ছিল ৬৪ হাজার ৭১৪ কোটি টাকা। ব্যাংকের তারল্য ব্যবস্থাপনার কাজটি করে থাকে ট্রেজারি বিভাগ। একাধিক ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আর্থিক প্রতিবেদনে যেভাবে ব্যাংকগুলোর আয়ের হিসাব করা হয়, তাতে প্রকৃত সুদ আয় হিসাব করা হয় ঋণের সুদ আয় থেকে আমানতের সুদ ব্যয় বাদ দিয়ে। কিন্তু বিনিয়োগের আয়ের বিপরীতেও ব্যাংকগুলোর খরচ থাকে। কিন্তু আর্থিক হিসাবে সেটিকে আলাদা ব্যয় হিসেবে দেখানো হয় না। বিনিয়োগের সুদকে পুরোটাই আয় হিসেবে দেখানো হয়। এ কারণে অনেক ব্যাংকের প্রকৃত সুদ আয়ের চেয়ে বিনিয়োগ আয় বেশি।