দেশে ২০২৪ সালের শেষে স্বল্প আয়ের মানুষের ব্যাংক হিসাবে আমানতের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে যার পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে স্বল্প আয়ের মানুষের ব্যাংক হিসাবে জমা টাকা বেড়েছে ১২০ কোটি টাকা বা ২ দশমিক ৬১ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে কৃষক ও তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ১ লাখ ২৫ হাজারের বেশি বেড়েছে। একই সময়ে ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা সর্বোচ্চ ১৭ দশমিক ৪১ শতাংশ বেড়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের। হিসাব সংখ্যা সর্বোচ্চ ৪ দশমিক ৫২ শতাংশ কমেছে অতি দরিদ্র মানুষের।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং–সুবিধা দিতে ২০১০ সালে ১০, ৫০ ও ১০০ টাকার ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ করে দেয় সরকার। এগুলোকে মাশুলবিহীন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অথবা নো ফ্রিল অ্যাকাউন্ট বলা হয়। এই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সাধারণত ন্যূনতম শর্তে খোলা যায় এবং এতে কোনো অতিরিক্ত ফি প্রযোজ্য হয় না। মূলত আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া বা নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য এই হিসাবপদ্ধতি তৈরি করা হয়েছে। কৃষক আর তৈরি পোশাকশ্রমিক ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা, অতিদরিদ্র মানুষ এবং সামাজিক সুরক্ষাবেষ্টনীর আওতাধীন নাগরিকেরা এই হিসাব খুলতে পারেন। এর মধ্যে কৃষকদের ব্যাংক হিসাব ও আমানত সবচেয়ে বেশি।
কয়েক মাস ধরে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ব্যাংক খাতে কিছু ক্ষেত্রে সংকট দেখা দেয়। অন্তবর্তী সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের ফলে ব্যাংক খাতের ওপর ধীরে ধীরে মানুষের আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোকে ঠিক করতে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকও বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এর ফলে স্বল্প আয়ের মানুষের ব্যাংক হিসাবে আমানত এর মধ্যে কিছুটা কমলেও তা আবার বাড়তে শুরু করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় ২০২৪ সালের একই সময়ে কৃষকদের আমানতের বার্ষিক স্থিতি বেড়েছে ২৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। তৈরি পোশাকশ্রমিকের ক্ষেত্রে বৃদ্ধির এই হার ৩০ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
২০২৩ সালে ব্যাংকগুলোতে নো ফ্রিল অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৬৯ লাখ ৮৩ হাজার ৫৬০টি। ২০২৪ সালে এই হিসাবের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৮১ লাখ ২৩ হাজার ৩৯০টিতে। অর্থাৎ এক বছরে স্বল্প আয়ের মানুষের ব্যাংক হিসাব বেড়েছে ৪ দশমিক ২২ শতাংশ। এদিকে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে মাশুলবিহীন সব ব্যাংক হিসাবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয়ের স্থিতি ছিল ৭৭২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, যা একই বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় ৬ দশমিক ১৬ শতাংশ বেশি।