দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা বা সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বাণিজ্য তাদের মোট বাণিজ্যের তুলনায় খুবই নগণ্য। এই দেশগুলোর মোট বাণিজ্যের মাত্র ৫ শতাংশ হয় নিজেদের মধ্যে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য হলে এই অঞ্চলের দেশগুলোর আন্তবাণিজ্য বাড়বে। স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য করতে হলে অবশ্য বেশ কিছু সংস্কার করতে হবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বেড়েছে। এতে আমদানিনির্ভর দেশগুলো বিপাকে পড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত কমে যাওয়ায় বাংলাদেশকেও আমদানি সীমিত করতে হয়েছে। এই বাস্তবতায় স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য শুরুর ধারণা গতি পেয়েছে। ভারতের সঙ্গে তাদের মুদ্রা রুপিতে বাণিজ্য করার চুক্তি করেছে বাংলাদেশ, যদিও এ উদ্যোগ এখনো সফল হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সার্ক অঞ্চলের দেশগুলোর ভৌগোলিক নৈকট্য থাকলেও তাদের বাণিজ্যনীতি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে এত ভিন্নতা রয়েছে যে সেগুলোই পরস্পরের সঙ্গে স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অর্থনৈতিকভাবে এই দেশগুলো পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্যের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কাটাতেই এমন উদ্যোগ। ডলারের সঙ্গে এসব দেশের মুদ্রার বিনিময় হারের ক্ষেত্রে যে অস্থিরতা আছে, তা নিরসনে এমন উদ্যোগ কাজে আসতে পারে।
দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের মোট জনসংখ্যা ১ দশমিক ৯ বিলিয়ন বা ১৯০ কোটি। এই দেশগুলোর সম্মিলিত জিডিপির আকার ৪ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন বা ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি ডলার (এক ট্রিলিয়নে এক লাখ কোটি)। এর মধ্যে ভারতের হিস্যা সর্বাধিক; তাদের পেছনে রয়েছে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। এই অঞ্চলের দেশগুলোর মূল্যস্ফীতির হার এক নয়। এখন বাংলাদেশে দুই অঙ্কের কাছাকাছি, পাকিস্তানে দুই অঙ্কের ঘরে রয়েছে মূল্যস্ফীতি, যা ভুটান, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কায় অনেকটাই কম। তবে সব দেশেই অর্থনৈতিক সমস্যা আছে, তারপরও মূল্যস্ফীতির হারে ভিন্নতা লক্ষণীয়। সাক্ষরতার হারেও ভিন্নতা লক্ষণীয়। যেমন শ্রীলঙ্কার সাক্ষরতার হার যেখানে ৯০ শতাংশের ওপরে, সেখানে আফগানিস্তানে তা ৪০ শতাংশের নিচে।