দেশের বানিজ্যিক রাজধানী বলা হয় চট্টগ্রামকে। আমদানি-রপ্তানী বাণিজ্যের ৮০ ভাগ পরিবাহিত হয় চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে। ৭টি প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে বন্দরের কনটেইনার ওঠানো-নামানোর ব্যবসা । প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনোটিতে বিগত সরকারের নেতা অথবা তার ফ্যামিলির সদস্যদের মালিকানা রয়েছে।
৭ প্রতিষ্ঠানের একটি সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রুহুল আমিন সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, নূর-ই-আলম চৌধুরী ও স্থানীয় এম এ লতিফ এমপি’র ঘনিষ্ঠ ছিলেন। সাইফ পাওয়ারটেকের ৬টি জেটির মাধ্যমে বন্দরের ৬৫ শতাংশ কনটেইনার ওঠানো-নামানো হয়। এম এইচ চৌধুরী লিমিটেড ও বশির আহমেদ অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় রয়েছেন বিগত সরকারের নেতা আ জ ম নাছির উদ্দীন। এভারেস্ট পোর্ট সার্ভিসেস লিমিটেড নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানে মালিকানা ছিল আ জ ম নাছির উদ্দীন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী এর প্রটোকল কর্মকর্তা আলাউদ্দিন নাসিমের।
এ অ্যান্ড জে ট্রেডার্সে মালিকানায় আছেন নোয়াখালীর সাবেক সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী। ফজলীসন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলে ইকরাম চৌধুরী। এফ কিউ খান অ্যান্ড ব্রাদার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবু শরীফ। তাদেরও রয়েছে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা । কনটেইনার ওঠানো-নামানোর বিনিময়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বন্দর থেকে টাকা পায়। এই টাকার পরিমাণ কত হবে, তা দরপত্রের মাধ্যমে ঠিক হওয়ার কথা। এ ক্ষেত্রে প্রকৃত প্রতিযোগিতা হলে কনটেইনার ব্যবস্থাপনার ব্যয় অনেক কমে আসার সুযোগ তৈরি হতো।
কনটেইনার ওঠানো-নামানোর ব্যবসায় বিনিয়োগ কম, নিশ্চিত মুনাফা বেশি। সরকারঘনিষ্ঠরা বেশি টাকায় কাজ নিয়েছেন। যার অর্থমূল্য দুই হাজার কোটি টাকার বেশি। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অন্য কাউকে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সহ-সভাপতি এ এম মাহবুব চৌধুরী।
বন্দরে কারো একক আধিপত্য চায় না পোশাক রপ্তানী কারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। সংস্কারের মাধ্যমে একাধিক অপারেটর নিয়োগ করা হলে পরিচালনা ব্যয় কমে আসবে বলে দাবি করেন বিজিএমইএ নেতা এস এম আবু তৈয়ব।
অন্তর্বর্তী সরকারের নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বন্দর পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, বন্দরে অনেক অনিয়ম হয়েছে। অনেক লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। সবই নজরে আছে। বন্দরে এখন থেকে সব দরপত্র উন্মুক্ত পদ্ধতিতে হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরে এখন স্বচ্ছতা আনার সুযোগ তৈরি হয়েছে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পর থেকে। বন্দরকে সিন্ডিকেট ও দুর্নীতিমুক্ত করতে হাজার কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা দরকার বলছেন সংশ্লিষ্টরা