প্রায় তিন বছর ধরে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। সেই সঙ্গে আছে এখনকার বিশেষ রাজনৈতিক বাস্তবতা। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে সাধারণত অর্থনীতির অধোগতি দেখা যায়। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশ ব্যাংক আবারও নীতি সুদহার বাড়ালে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে বলেই শঙ্কা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, অর্থবছরের প্রথম চার মাসের শেষে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৬৬। এই হার গত সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। শুধু তা-ই নয়, এ সময় শিল্পের প্রয়োজনীয় মধ্যবর্তী পণ্য ও মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিও কমেছে। এ ছাড়া ২০২৩ সালের জুলাই-নভেম্বরের তুলনায় ২০২৪ সালের একই সময়ে ভোগ্যপণ্য আমদানির ‘এলসি সেটেলমেন্ট’ কমেছে ১৩ শতাংশ। অর্থাৎ ঋণপত্রের নিষ্পত্তি হয়েছে কম।
ভোগ্যপণ্যের আমদানি কমলে বাজারে জোগান কমে দাম বেড়ে যায়, এটাই অর্থনীতির চিরাচরিত নিয়ম। অন্যদিকে মূলধনি ও মধ্যবর্তী পণ্যের আমদানি কমলে অর্থনীতির ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ ও সক্ষমতা কমে যায়। এ সবকিছুর প্রভাব পড়ে প্রবৃদ্ধির ওপর। বিশ্বব্যাংকের মতে, চলতি অর্থবছরে যা ৪ দশমিক ১ শতাংশে নামবে। সেটা হলে তা হবে দুই দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি, কেবল কোভিড–১৯–এর ২০২০-২১ অর্থবছর বাদে।
এই পরিস্থিতিতে জানুয়ারি মাসের শেষ ভাগে মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব নেওয়ার পর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গত পাঁচ মাসে ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট করে তিন দফা নীতি সুদহার বাড়ানো হয়েছে, বর্তমানে যা ১০ শতাংশ। নীতি সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হচ্ছে না, বরং এর প্রভাবে বাজারে সব ধরনের ঋণের সুদহার বেড়ে গেছে। বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদাও তলানিতে নেমে এসেছে, অর্থনীতিতে যার দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এখন একধরনের স্ট্যাগফ্লেশন (নিম্ন প্রবৃদ্ধি+ উচ্চ মূল্যস্ফীতি+ উচ্চ বেকারত্ব) চলছে অর্থনীতিতে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী মুদ্রানীতিতে কী পদক্ষেপ নেবে, সেটাই দেখার বিষয়।তবে অনেকেই মনে করেন, উন্নত বিশ্বে সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হলেও আমাদের দেশে সম্ভব নয়। যেসব দেশের ৯০ শতাংশই ভোক্তাঋণ, সেখানে তা সম্ভব হতে পারে। তারা বাড়ি, গাড়িসহ নানা কাজে ঋণ নেন। ফলে সেসব দেশে সুদহার বাড়িয়ে ভোগব্যয় কমানো যায়। কিন্তু আমাদের দেশে ৮৫ শতাংশ ঋণই ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য নেওয়া হয়। এখানে সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়, সরকারি তথ্যেই যার প্রমাণ পাওয়া যায়।
উল্টো বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি তলানিতে ঠেকেছে, অর্থাৎ দেশে বিনিয়োগ হচ্ছে না। জিডিপি প্রবৃদ্ধিও কমে সর্বনিম্ন অবস্থায় নেমেছে। খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ১৫ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসায়ীদের পক্ষে ব্যবসা করা প্রায় অসম্ভব।
মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক! কি প্রভাব পড়তে যাচ্ছে নীতি সুদ বাড়লে!
RELATED ARTICLES